প্রকাশিত: Mon, Dec 19, 2022 5:25 AM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 6:57 AM

কাতার বিশ্বকাপ এবং আনন্দ-বদেনার একমাস

শামীম আহমদে: ১৯৯০ সাল আমাদরে জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বর্পূণ বছর। র্দীঘদনি সামরকি শাসনরে শষেরে বছর। পুলশিরে সাথে মানুষরে সংগ্রাম, সংঘাত নত্যিকার ঘটনা। আমরা মরিপুর থাক।ি সারা বাংলাদশেরে মধ্যে মরিপুরইে আন্দোলন-সংগ্রামরে চত্রি সবচয়েে কর্দয। টানা ছয় মাস ধরে এরশাদ সরকাররে বরিুদ্ধে আন্দোলন চলছ,ে একজন শশিুর পক্ষে আন্দোলন ও আন্দোলন দমনরে পাল্টাপাল্টি র্কমসূচি দনিরে পর দনি সহ্য করা কঠনি। ছাত্ররা কবরস্থানরে সামন,ে মরিপুর বাংলা উচ্চ বদ্যিালয়রে বালক শাখার আশপোশরে গলি থকেে জনতা সমানে ইট-পাটকলে ছুঁড়ে মার,ে পুলশিও ছুটে যায়। গুলি ছােঁড়,ে টয়িার গ্যাস মার,ে খস্তি-িখাউড় কর।ে মাঝে মাঝে অতষ্ঠি হয়ে গলেে প্যান্টরে জপিার খুল,ে নটরডমে কলজেরে বাংলার শক্ষিক মুখতার আহমদে স্যাররে ভাষায় ‘এটা-ওটা’ বরে করে দখোয়। জনতা মজা পয়েে দ্বগিুণ উৎসাহে আন্দোলন চালয়িে যায়। আন্দোলনে মানুষ মরছলিো কাকরে মতো। এরশাদরে সময় পুলশি, সনোবাহনিী সব এক, সবার একটাই কাজ- মানুষ মারা। একসময় এই সরকাররে পতন হয়। এরপর কী হব?ে নর্বিাচনে কোন দলকে সর্মথন করব? আমার বয়সী অন্য ছলেপেলেরো তখনও এসব নয়িে ভাবে না। আমি দ্বারস্থ হলাম আমার ছোট চাচা জয়িাউদ্দনি আহমদে বটিুর। উনি পরার্মশ দলিনে কমউিনস্টি র্পাটি করত।ে সারা পৃথবিীতে তখন কমউিনজিমরে পতন চল।ে দশেরে কমউিনস্টি র্পাটওি বভ্রিান্ত। আমার বাড়তিে কউে আওয়ামী লীগ করে না, বএিনপরি দাপট বশে।ি কন্তিু ব্যাপক পড়ালখো করে আমি সদ্ধিান্ত নলিাম আওয়ামী লীগ করবো। ১৯৯১ সালরে নর্বিাচনে আওয়ামী লীগরে র্প্রাথী ড. কামাল হোসনেরে পক্ষে রাস্তায় মছিলি শুরু হলে আর শষে হয় না। হাজার হাজার মানুষ। সবাই জানে আওয়ামী লীগ নর্বিাচনে জতিব।ে পাকস্তিানরে ভূত তাড়য়িে ১৯৭৫ সাররে পর বাংলাদশে আবার স্বাধীনতার দল আওয়ামী লীগরে কাছে ফরিে যাব।ে নর্বিাচনরে ফলাফলে সবাই অবাক, আওয়ামী লীগ হরেে গছে।ে খুবই উদাস হলাম। ১৯৭৫ সালরে পর থকেে এই দল ক্ষমতার বাইর,ে র্দীঘশ্বাস ফলেে ভাবলাম, এই দল নশ্চিয়ই আর কখনও ক্ষমতায় আসবে না। 

১৯৯০ সালরে আরকেটা গুরুত্বর্পূণ ঘটনা ছলিো বশ্বিকাপ ফুটবল। ১৯৮৬ সালরে বশ্বিকাপরে কোনো স্মৃতি আমার নইে, কন্তিু ওই বশ্বিকাপে ম্যারাডোনার জাদুকরি পারফরম্যান্সরে প্রভাবে ১৯৯০ সালে উত্তাল ছলিো বাংলাদশে। আমরা স্কুলে টফিনিরে টাকা জময়িে ম্যারাডোনার ছবি সম্বলতি ভউির্কাড, স্টকিার, পোস্টার কনি-ি দওেয়াল,ে ফ্রজি,ে বই-খাতায় লাগয়িে রাখ।ি প্রথমবাররে মতো একটা পুরো কবতিা লখিি তাঁকে নয়ি,ে কটা লাইন এখনও মনে আছ।ে বশ্বিকাপে হট ফভোরটি দল র্আজন্টেনিা, সইে দলতেে আছে তরুণ দয়িাগো ম্যারাডোনা। পত্রকিায় ম্যারাডোনার ছবি আসলে কটেে সংরক্ষণ কর।ি সারা বাংলাদশে যনে ম্যারাডোনা উন্মাদনায় ভুগছলিো, আমরাও সইে উন্মাদনায় গা ভাসাই। বশ্বিকাপ ফাইনাল হয় র্আজন্টেনিার ও পশ্চমি র্জামানরি মধ্য।ে ওটাই ছলিো পশ্চমি র্জামানরি শষে বশ্বিকাপে অংশগ্রহণ। এরপর দুই র্জামানরি এক হয়ে যায়। ১৯৯০ সালরে বশ্বিকাপে সোভয়িতে ইউনয়িন ও চকেোস্লোভাকয়িাও শষেবার অংশগ্রহণ কর,ে পরর্বতী সময়ে ওই দুটো দশে ভঙেে টুকরো টুকরো হয়। যাই হোক, ১৯৯০ সালরে ফাইনাল ছলিো আমার জীবনরে অন্যতম বদেনাদায়ক একটি স্মৃত।ি 

র্আজন্টেনিা পুরো বশ্বিকাপইে- ভাগ্য, ম্যারাডোনা ও তাদরে গোলকপিাররে সহায়তায় জতিে ফাইনালে আস।ে ফাইনালওে পশ্চমি র্জামানি অপক্ষোকৃত ভালো খলে।ে এর মধ্যে রফোরি র্আজন্টেনিার সাথে বরৈী আচরণ কর।ে ৬৫ মনিটিরে সময় র্আজন্টেনিার পদেরো মোনযোনকে লাল র্কাড ও ৮৭ মনিটিে গুসতাভো দজেোত্তকিে দ্বতিীয়বাররে মতো হলুদ র্কাডরে ফলশ্রুততিে লাল র্কাড দখেয়িে মাঠ থকেে বরে করে দয়ে। অন্যায্য পনোল্টতিে ১ গোলরে ব্যবধানে যখন পশ্চমি র্জামানি বশ্বিকাপ জতে,ে তখন র্আজন্টেনিা ৯ জনরে দল নয়িে মাঠ ছাড়।ে ম্যারাডোনা কান্নায় ভঙেে পড়।ে মনে আছে আমওি সদেনি খুব কঁেদছেলিাম। সারা বাংলাদশে কঁেদছেলিো। র্আজন্টেনিা ওই বশ্বিকাপ ভাল খলেনে,ি কন্তিু ম্যারাডোনা আর গোলকপিাররে অসামান্য পারফরমন্সেরে পরওে শুধুমাত্র ইউরোপকে জতিয়িে দওেয়ার জন্য রফোরি ও ফফিার সইে বমিাতাসুলভ আচরণ, র্আজন্টেনিার দুইজন খলেোয়াড়কে লাল র্কাড দখোনো, র্আজন্টেনিার পক্ষে যৌক্তকি পনোল্টি না দওেয়া, ও পশ্চমি র্জামানকিে অন্যায্য পনোল্টি দওেয়া এই সব ঘটনা সারা পৃথবিীর মানুষকইে কাঁদয়িছেলি। আমার মনে হয়ছেলিো র্আজন্টেনিা আর কখনও ফুটবলে বশ্বিকাপ জতিবে না। এর কছিুদনি পর ১৯৯২ সালে ক্রকিটে বশ্বিকাপ অনুষ্ঠতি হয়। বাংলাদশেে তখনও পাকস্তিান ক্রকিটে প্রমে তুঙ্গ।ে দশেরে বশেীরভাগ মানুষ পাকস্তিানকে সর্মথন কর।ে আমার তখন রাজনতৈকি দীক্ষা চলছ।ে নজিইে নানা বই, ইতহিাস নয়িে গবষেণা করে পাকস্তিানকে ঘৃণা করা শুরু করছে।ি মুক্তযিুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা, ২ লক্ষ নারী র্ধষণ, বাংলাদশেকে র্দীঘদনি বঞ্চনা ও শোষণরে কারণে তাদরে কোনভাবইে দখেতে পারি না। তাই স্রোতরে বপিরীতে গয়িে আমি সর্মথন করলাম ভারতক।ে 

মূলত আমাদরে মুক্তযিুদ্ধে ভারতরে সর্মথন, সহযোগতিা ও শচীন টন্ডেুলকাররে ভক্ত হসিবেে আমার এই অবস্থান। শচীন টন্ডেুলকাররে কমপক্ষে তনিটা র্অধশতকরে কথা এখনও মনে আছ,ে কন্তিু ভারত বশ্বিকাপে খুব একটা ভালো খলেনে।ি তাঁরা বদিায় নওেয়ার পর মনে হলো ভারত বুঝি আর কখনও বশ্বিকাপ জতিতে পারবে না। ভারত বাদ যাবার পর আমি আর বশ্বিকাপরে খলো দখেনি।ি মনে আছে পাকস্তিান আর ইংল্যান্ডরে ফাইনাল চলার সময় আমি মরিপুর ইন্ডোর স্টডেয়িামে জোহা, রনি আর লওিনদরে সাথে ফুটবল খলেছলিাম, বাসায় ফরোর পর আমার আব্বা আমাকে র্ভৎসনা করে বলছেলিনে, সারা দুনয়িার মানুষ ইমরান খানরে খলো দখেছে আর তুমি মাঠে পড়ে আছো। তাঁর র্ভৎসনা আমাকে পাকস্তিানকে আরও দৃঢ়ভাবে ঘৃণা করতে উদ্বুদ্ধ করছেলিো।  যাই হোক, আমার বড়েে ওঠার সময় খুব ভালবাসা দয়ি,ে নজিরে বুদ্ধি ববিচেনা কাজে লাগয়িে এই তনিটি দলকইে সর্মথন করে হরেে গয়িছেলিাম [১] আওয়ামী লীগ [২] র্আজন্টেনিা [৩] ভারত। মনে হয়ছেলি এরা আর কখনই জতিবে না। ১৯৯০ এর বশ্বিকাপ ফুটবল চলাকালীন সময়ে আমাকে আব্বা-আম্মা তাদরে ডন্টেস্টি ডঃ শহদিুল্লাহর কাছে নয়িে গয়িছেলিনে। দাঁতে অবশ করার ইনজকেসান দওেয়ার সময় আমি কঁেদে দয়িছেলিাম। ডন্টেস্টি জজ্ঞিসে করছেলিনে আমি কোন দলরে সর্মথন কর।ি র্আজন্টেনিা বলায় তনিি হসেে বলছেলিনে ম্যারাডোনার মতো আমওি ভীতু। তার কথা শুনে আমার আম্মা হসেে দয়িছেলিনে। এই ডন্টেস্টিকে এখনও আমার আব্বা আম্মা দাঁত দখোন। কন্তিু আমি বড় হয়ে আর কখনও তার কাছে যাইন।ি সইে শশিুকাল,ে সইে ১৯৯০ সালে তাঁর হাসমিুখ আমার মধ্যে যে ঘৃণার জন্ম দয়িছেলিো, সটো আমি কখনও ভুলনি।ি বহুদনি মনে হয়ছেলিো হয়তো র্আজন্টেনিা আর ম্যারাডোনার সর্মথন করি বলইে আমি এতো নরম মনরে ছলিাম। পরে বড় হয়ে জনেছেি এটা ভুল, আমি জানি আমি কতো শক্ত, একরোখা, জদে,ি কারও ধার না ধরা একজন মানুষ। কন্তিু সইে নরম মনরে শশিুকে আঘাত দওেয়ায় ওই ডন্টেস্টি আর কখনও আমার কাছে শ্রদ্ধা পায়ন।ি তাই এখন আমি খুব সর্তক থাক,ি যকেোনো ঘটনায় অহনার মন বুঝে সাড়া দওেয়ার চষ্টো কর,ি তার পক্ষে থাক।ি কোনো ঘটনা যে একটু শশিু মনে র্দীঘময়োদী প্রভাব ফলে,ে তা বোঝা খুব কঠনি।  

১৯৯৬ সালে এসে আওয়ামী লীগ যখন নর্বিাচনে জতে,ে আমার মনে হয়, আমার যকেোনো প্রয়ি দলই তাহলে জতিতে পার।ে ২০১১ সালে ভারতও ক্রকিটেে বশ্বিকাপ জতে।ে ১৯৯০ দশকে পাকস্তিানরে যে একচ্ছত্র সর্মথন ছলিো বাংলাদশে,ে শচীন টন্ডেুলকার, সৌরভ গাঙ্গুল,ি রাহুল দ্রাবড়ি, অজয় জাদজো, সহেবাগ প্রমুখ তাদরে খলোর গুণে সখোন থকেে অনকে বাংলাদশেীকে ভারতীয় ক্রকিটেরে সর্মথক বানান। তবে এর পছেনে মূল ভূমকিা শচীন টলেন্ডুকাররে। র্সবকালরে সরো ক্রকিটোর শচীন শুধু তাঁর খলোর জাদুতইে নয়, বনিয় ও আচার-আচরণ দয়িে সারা বশ্বিরে মতো বাংলাদশেীদরেও মন জয় কর।ে তবে বাংলাদশে ক্রকিটেে শক্তশিালী দল হসিবেে প্রতষ্ঠিা পাবার পর থকেে ভারতকে আর সর্মথন করি না, বশিষেত শচীন ও সৌরভরে বদিায়রে পর ভারত যখন ভরিাট কোহলীর মতো অভদ্র ক্রকিটোরদরে কাছে গয়িছে,ে তখন থকেে আমি ভারত ক্রকিটে দলকে পাকস্তিান ক্রকিটে দলরে মতোই অপছন্দ কর।ি এর সাথে আবার যুক্ত হয়ছেে ভারতরে আইসসিরি মাধ্যমে অন্যায়ভাবে ক্রকিটেকে প্রভাবতি করার নয়িমতি ঘটনা। একসময়রে পছন্দরে তনিটি দলরে দুটো দলই জয় পয়েছে,ে কন্তিু র্আজন্টেনিা আর শরিোপা জয় করতে পারনে।ি ২০১৪ সালরে ১৩ জুলাই আবার বশ্বিকাপরে ফাইনালে ওঠে র্আজন্টেনিা। বলাই বাহুল্য এবারও সইে মসে,ি গোলকপিাররে জাদুতে ফাইনালে উঠলওে শষেমশে আর শরিোপা জয় করা হয়নি তাদরে। ২০১৪ সালরে বশ্বিকাপ ফাইনালে র্জামানরি চাইতে র্আজন্টেনিা বশেী সুযোগ পায় কন্তিু তাদরে মূল স্ট্রাইকার হগিুয়নে একাধকি সুযোগ হাতছাড়া কর,ে এছাড়া রফোরওি একটি নশ্চিতি পনোল্টি থকেে বঞ্চতি করে র্আজন্টেনিাক।ে অতরিক্তি সময়রে দ্বতিীর্য়াধে র্জামানরি বদলি খলেোয়াড় মারওি গোটজে গোল করে র্জামানকিে শরিোপা এনে দয়ে। সারা র্টুনামন্টেে ধুঁকতে থাকা র্আজন্টেনা ফাইনালে পৗেঁছওে রফোররি বরৈী আচরণে শরিোপা জতিতে র্ব্যথ হয়। মসেি গোল্ডনে বল পায়। 

২০২২ সালরে ১৮ ডসিম্বের আবার বশ্বিকাপ ফাইনালে উঠছেে র্আজন্টেনিা। কন্তিু এবাররে র্আজন্টেনিা দল ১৯৯০ কংিবা ২০১৪ সালরে দলরে চাইতে সর্ম্পূণ ভন্নি। ১৯৮৬ সালরে পর আবার র্আজন্টেনিা একটি শক্তশিালী দল হসিবেে ধারাবাহকিভাবে ভালো খলেে ফাইনালে উঠছে।ে বশ্বিকাপে তাদরে প্রতটিি ম্যাচ দখেছেি বলে বলতে পারি এতো শক্তশিালী ও গুছানো র্আজন্টেনিার খলো আমি ১৯৯০ সাল থকেে শুরু করে কখনই দখেনি।ি ৩৫ বছররে মসেি তাঁর সরো পারফরম্যান্স দখোচ্ছ।ে গোলকপিার থকেে ডফিন্সে, মডিফল্ডি থকেে ফরোর্য়াড থকেে সব জায়গায় র্আজন্টেনিার খলেোয়াড়রা সরো খলেছনে। আমি নর্দ্বিধিায় বলতে পারি এবাররে বশ্বিকাপরে সরো দল র্আজন্টেনিা। প্রতপিক্ষ ফ্রান্সও র্দূদান্ত খলেছে এবং এটা একটা উত্তজেনাকর বষিয় যে র্টুনামন্টেরে সরো দুটো দলই ফাইনালে মুখোমুখি হয়ছে।ে মসেি ফ্যাক্টরকে যদি আলাদা করে না-ও দখে,ি আমি বলব দলরে শক্তি ববিচেনায় আজকরে খলোয় র্আজন্টেনিার জতোর সম্ভাবনা ৬০ ভাগ। আর যদি মসেি ফ্যাক্টর কাউন্ট করি সইে ক্ষত্রেে র্আজন্টেনিার জতোর সম্ভাবনা ৮০ ভাগ। ঈষৎ সংক্ষপেতি। লখেক: জনস্বাস্থ্য বশিষেজ্ঞ